ভিক্ষা নয় কষ্ট করে উপার্জন করে জীবন পার করছেন এক বৃদ্ধ মহিলা

জিন্নাত হাসানঃ আমার বাসার গলিতে এক বৃদ্ধ মহিলা রাস্তার পারে দুইটা চায়ের ফ্লাক্স আর কিছু বিস্কিট এবং পান বিক্রি করেন। মহিলা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এগুলো বিক্রি করেন। সারাদিন এখানে বসেই জীবন পার করে। তিনি খুব শান্ত স্বভাবের এবং কথাও খুব কম বলে। তাকে আমি বহুদিন ধরে নোটিশ করছি এই কারণে যে এই বয়সে ও উনি একটা ব্যবসা করে উপার্জন করছেন তবুও ভিক্ষা করেন না। 

একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এই বয়সে এই কাজ করতে আছেন কেন? 

উত্তরে যেটা শুনলাম সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। তিনি বললেন আমি ছাড়া কে করবে বাবা। স্বামী স্টোক করে মারা গেছে বহুদিন হয়েছে। নেই কোন ছেলে যে উপার্জন করে খাওয়াবে। দুইটা মেয়ে ছিল একটা তো অনেক আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। আর একটা মেয়ে ভালোই ছিল, তার বিয়াও হয়েছিল। বছর দিন আগে জামাই স্টোক করেছে মারা গেছে মারা গেছে। এই মেয়েটাই বাসায় কাজ করে আমারে খাওয়াইতো। কিন্তু আজ মেয়েটা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আমি আগে যে বাসায় কাজ করতাম সেই বাসার মালিকে কিছু টাকা দিছে আর নিজের যা ছিল তাই দিয়েই ব্যবসা শুরু করি। আজকে এক বছরের বেশি সময় ধরে এই রাস্তার পাড়ে বসে এগুলো বিক্রি করি। এখান থেকেই যা পাই তা দিয়েই জীবন পার করছি। যে কয়দিন বেঁচে আছি এভাবেই জীবন পার করতে হবে। 

তিনি চাইলে তো ভিক্ষা বা মানুষের কাছে হাত পেতে চেয়ে চেয়ে খাইতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেনি। তিনি কষ্ট করে উপার্জন করে খাইতে চেয়েছেন। দৈনিক যা বিক্রি করে তা থেকে খুব বেশি লাভ হয় না কিন্তু তারপরও তিনি রোদ-বৃষ্টি না মেনে এখানেই বসে এগুলো বিক্রি করেন।

কারো কাছে হতে পারে এটা গল্প বা কাহিনী কিন্তু আমার কাছে এটা ৬৫+ বছরের এক হার না মানা বৃদ্ধ মহিলার সংগ্রামী জীবন কাহিনী। 


0/একটি মন্তব্য করুন/Comments