বাংলাদেশের অবস্থাও কি শ্রীলংকার মতো হতে যাচ্ছে

বাংলাদেশের অবস্থাও কি শ্রীলংকার মতো হতে যাচ্ছে?

অর্থনীতি ডেস্কঃ

শ্রীলংকার সরকার অবশেষে জানিয়ে দিয়েছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তাদের নেই। অর্থাৎ নিজেদেরকে দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হল দেশটি। এটা অবশ্য বোঝাই যাচ্ছিল গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপট দেখে ধারণা করা যাচ্ছিল দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই শ্রীলঙ্কার সামনে। তবে শ্রীলঙ্কার এই দুরাবস্থার সময় বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেকেই বেশ চিন্তিত। বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণের ভারে জর্জরিত হওয়াটা শ্রীলংকার আজকের অবস্থানে একটা বড় কারণ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে বাংলাদেশকেও প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিতে হচ্ছে। এখানে দুর্নীতি আছে, আছে মুদ্রাস্ফীতি, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। আজ থেকে কয়েক বছর পর বাংলাদেশের অবস্থা ও শ্রীলঙ্কার মতো হবে নাতো? 

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আপনাকে পুরো আর্টিকেলটা পড়তে হবে।

তার আগে প্রথমে আমি ব্যাখ্যা করব শ্রীলংকার বর্তমান দুরবস্থার কারণগুলো নিয়ে। জটিল কোনো রাজনৈতিক অর্থনৈতিক আলোচনা নয় খুব সাদামাটা ভাবে আমি বোঝানোর চেষ্টা করব পুরো বিষয়টি তাহলে শুরু করা যাক। শ্রীলঙ্কায় গত কিছুদিন ধরেই জ্বালানি তেলের সংকট চলছে, দারুণভাবে রান্নার গ্যাসের অভাব, ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। দিনের বেশিরভাগ সময় থাকছেনা বিদ্যুৎ। 

কাগজের অভাবে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষা, সংবাদপত্র প্রকাশক। অভাব দেখা দিয়েছে কেরোসিন কিংবা পেট্রোলের বাজারে। শ্রীলংকা এমন একটি দ্বীপরাষ্ট্র যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। যেমন এলপিজি গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল। কিন্তু এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা দেশটির কোষাগারে নেই। কারণ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে গেছে। বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটি পারছেনা ঋণের কিস্তি শোধ করতে। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট বেসামাল করে তুলেছে দেশটির অর্থনৈতিকে। এই সংকটের আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য তৈরি করেছে। গণতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এর বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে শ্রীলংকার সাধারণ মানুষ। সেনাবাহিনীর সাথে হয়েছে তাদের সংকোচন। কলম্বোর রাস্তায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। 1948 সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর গত 74 বছরের ইতিহাসে এতটা খারাপ অবস্থায় কখনো পড়েনি এক সময়ের দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর অবস্থানে থাকা দেশটি।

শ্রীলংকার এই মরণ দশা কেন ?

শ্রীলংকা আয়ের একটা বড় অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। আয়তনে ছোট হলেও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের 

চেয়ে পর্যটন স্থান হিসেবে শ্রীলংকা অনেক বেশি জনপ্রিয়। 2009 সালে এই খাত থেকে শ্রীলংকার আয় ছিল 12 বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। শ্রীলঙ্কায় অজস্র মানুষ পর্যটন সংক্রান্ত নানা ব্যবসা এবং চাকরির সাথে যুক্ত ছিল। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু বিপত্তিটা বাধে 2020 সালের করোনা ভাইরাসের আগমনে। গোটা পৃথিবী ঘরবন্দি হয়ে পড়ল। বন্ধ হয়ে গেল বিমান চলাচল ও দুর্যোগ নেমে এলো শ্রীলংকার। মহামারির কারণে রেমিটেন্সের পরিমাণ নেমে এলো প্রায় শূন্যের কোঠায়। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো। সেই ধাক্কার রেস তারা কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই দেশটিতে 2019 সালের ইস্টার সানডে অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে জঙ্গিরা কয়েকশো মানুষ নিহত হয়। সেই হামলায় যারা নিহত হয় তাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। বিদেশি পর্যটকদের কাছে যে শ্রীলংকা ছিল নিরাপদে গন্তব্যে সেই ধারণাটা বদলে যায় সেই হামলার পর।

ইস্টার সানডের হামলা এবং করনা মহামারিকে যদি একমাত্র কারণ ভাবেন শ্রীলঙ্কারই দুরবস্থার তাহলে কিন্তু আপনার ভুল হবে। অনেক বছর ধরেই বৈদেশিক ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে আছে শ্রীলংকা। বিশেষ করে গত 15 বছরে শ্রীলংকা বেশকিছু ব্যয়বহুল ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। 

টাকা তো খরচ হচ্ছে কিন্তু কাজে লাগছে না করো। উদাহরণস্বরূপ হাম্বানটোটা সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে এসব প্রকল্প বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনতে পারেনি এই দেশটির অর্থনীতির জন্য। শ্রীলংকার আজকের অবস্থার পেছনে সরকারের ভুল নীতিতে চলাটাকে ও দায়ী করতে হবে। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রতি উদাসীনতা।

যেমন শ্রীলঙ্কায় প্রতিবছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে 8% হারে। কিন্তু 2014 সাল থেকে দেশটির কোন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যুৎ সংকটের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত মেগা প্রজেক্ট শ্রীলংকার উন্নয়নের না হয় হয়েছে গলার কাঁটা। বিদেশে কাজ করা বহু শ্রীলংকার মানুষের চাকরি চলে গেছে করোনার সময়। এর ফলে কাজের পরিমাণ কমেছে। কমেছে শ্রীলংকার রেমিটেন্সের পরিমাণ। কিন্তু রাজ্য সরকার এসবের দিকে নজর দেয়নি বিন্দুমাত্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ব্যবস্থা বাড়ায়নি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে সংস্কারের নামে চরম গাফিলতির করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলংকার অর্থনীতি ঋণ নির্ভর। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো ঋণের বোঝা শ্রীলংকার ঘাড়ে কখনোই চেপে বসো নি। এমনকি গৃহযুদ্ধের সময় ও নয়। বর্তমানে শ্রীলংকার জিডিপির 119 শতাংশ। বিগত দেড় দশকে ধীরে ধীরে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়েছে। দেশটির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য বলছে ঋণের দায় পরিশোধ হিসেবে চলতি বছর শ্রীলঙ্কাকে সব মিলিয়ে 500 কোটি ডলার পরিশোধ দেয়ার কথা অথচ এখন শ্রীলংকার হাতেই আছে মাত্র 232 কোটি ডলারের। সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সুতরাং ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা দৈনন্দিন কাজ চালাতে ই নতুন করে আরও ঋণ নিতে হচ্ছে দেশটিকে। অন্যদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে গত দুই বছরে।

প্রেসিডেন্ট গতাবায়া রাজাপক্সা ভোটে জেতার জন্য ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তার এই ঘোষণা থাকে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে আনতে সাহায্য করেছিল। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় আগের তুলনায় 25 শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। যা শ্রীলঙ্কাকে অধিক বৈদেশিক ঋণ নিতে বাধ্য করে। আরেকটা ভুল শ্রীলংকা করেছে সেটা হচ্ছে কৃষিখাতের। রাতারাতি অর্গানিক ফার্মিং চালুর হঠকারি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এর চাপ কমাতে রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করেন। নিষিদ্ধ হয় কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। ফলো শ্রুতিতে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। বেড়ে যায় খাদ্যদ্রব্যের দাম। শ্রীলংকা সরকার কোন দিক বিবেচনা না করে এক ডলারের মূল্যবান 203 শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় বেঁধে দিয়েছিল। অথচ বাজারে এখন 1 ডলার বিক্রি হচ্ছে 240 থেকে 266 শ্রীলঙ্কার মুদ্রায়। এখন সেটা প্রায় 300 হয়েছে। ফলে অধিকাংশ মানুষ বেশি রোজগারের আশায় কালোবাজারে বিদেশি মুদ্রা ভাঙিয়েছেন। শ্রীলংকার মুদ্রাস্ফীতি এখন এমন ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে সেখানে চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে আড়াইশো থেকে তিনশত টাকায় 12 লিটারের এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের জন্য তিন হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে দেশের নাগরিকদের। টাকা হাতে নিয়ে বসে আছে তারা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছেনা কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি।

এবার আসা যাক ইন্টারেস্টিং সে আলোচনায়। বাংলাদেশ কি কখনো শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করতে পারে ?

আলোচনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ শ্রীলংকার অর্থনৈতি সম্পর্কে একটা পুরো ধারণা থাকা আপনার জন্য খুবই প্রয়োজন। শ্রীলংকার মোট ঋণ 33 বিলিয়ন ডলার যেহেতু দেশটির মোট জনসংখ্যা 2 কোটি 20 লাখ সেই হিসেবে শ্রীলংকার মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ 1650 মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মোট ঋণ 49 দশমিক 45 বিলিয়ন ডলার আর যেহেতু বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার 16 কোটি 93 লাখ সেই হিসেবে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ 292.11 ডলার। বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ছয় গুণ বেশি। করোনা মহামারীতে শ্রীলংকার রেমিটেন্স পৌঁছেছে তলানীতে। 2020-21 অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছিল 8 দশমিক 5 বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ওই অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স ছিল 24.78 বিলিয়ন ডলার। যা শ্রীলংকার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বিপদ জনক স্থানে নেই বাংলাদেশ। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণের হার এখন জিডিপির 38 শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশের মোট দেনার পরিমাণ ছিল 11 লাখ 44 হাজার 297 কোটি টাকা। এর প্রায় 37% এসেছে বিদেশি উৎস থেকে পরিমাণ 4 লাখ 20 হাজার 358 কোটি টাকা। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের হার জিডিপির 13%। সুতরাং আপাতত চিন্তিত হবার তেমন একটা কারণ নেই বলেই মনে হচ্ছে। কেননা আইএমএফ এর হিসেবে এই হার 55 শতাংশের বেশি মানেই হচ্ছে মহাবিপদ। তবে শ্রীলংকার উদাহরণ থেকে এখন থেকেই কয়েকটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রপ্তানি আয় কমে যাওয়াকে বিশেষজ্ঞরা এই সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।বর্তমানে শ্রীলংকার রপ্তানি আয়ের 8 দশমিক 5 বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় 38.75 বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় শ্রীলংকার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। 

মার্চ 2020 পর্যন্ত শ্রীলংকার রিজার্ভের পরিমাণ 2 বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ 44 দশমিক 4 বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ শ্রীলংকার চেয়ে প্রায় 22 গুণ বেশি আছে। অর্গানিক কৃষি চালুর কারণে শ্রীলঙ্কার খাদ্য উৎপাদন কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রমশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। বিদেশী ঋণ নিয়ে নির্মিত শ্রীলংকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সে দেশের মানুষের কোন কাজে আসেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল সরাসরি পাচ্ছে এদেশের মানুষ। পদ্মা সেতু, লেবুখালী সেতু, দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। আগামী কয়েক বছরে পায়রা বন্দর, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত টানেল, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্প কিংবা কক্সবাজার বিমানবন্দর এর মত প্রকল্পগুলোর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। 

একথা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় করোনাকালে শ্রীলংকার কর্মীরা কাজ হারিয়েছে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন নিজদেশে অথচ বাংলাদেশের ঘটেছে উল্টোটা করোনাকালে আমাদের রেমিট্যান্স আয়ের রেকর্ড করেছে। বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প গুলো জনবান্ধব, যুগোপযোগী ও টেকসই হলেও কিছু ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। এখন থেকে ভবিষ্যতের কোনো অবকাঠামোগত প্রকল্প গ্রহণের আগে প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা জনকল্যাণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের হার আইএমএফের ঘোষিত বিপদ সীমার নিচে। সুতরাং এই মুহূর্তে ঋণ পরিশোধের দায় থেকে বাংলাদেশ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারে। 2026 সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আর কম সুদে ঋণ পাবে না বেশি সুদে ঋণ নিয়ে বাড়বে দায়। তাই এখন থেকেই ঋণের দায় নিয়ে সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। নাগরিক জীবনে যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে এই বিষয়গুলোর দিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে খুব জলদি। বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশী। 

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আমদানি ব্যয় আরো বাড়লে রিজার্ভ ইউ টান পড়বে। যার অর্থ অবকাঠামো প্রকল্পে খরচ করার সুযোগ কমে যাবে অনেকটাই। সবমিলিয়ে তখন অর্থনীতির উপর বারবে চাপ। একারণে বড়ো প্রকল্পে অর্থ ব্যয় দায় পরিশোধ ও সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এই সর্তকতা ছিলনা বলেই আজ এই সীমাহীন বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে সবকিছু আমলে নিয়েও বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ, রপ্তানি আয়ের বৈদেশিক মুদ্রার, রিজার্ভ, রেমিটেন্স অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক বিবেচনায় এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার মত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুবই কম। শ্রীলংকা নাগরিকরা তাদের সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত এবং করোনার বলি হয়েছেন। যেটি আমাদের দেশে ঘটার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।

0/একটি মন্তব্য করুন/Comments